নিরেন দাস,বিশেষ প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে জমে উঠেছে ৫ শত ১৬ বছরের পুরনো দৌল পূর্ণিমা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলা। আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নে প্রতিবছর দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে এ মেলা বসে। দোলপূর্ণিমার দিন থেকে মেলাটি শুরু হয়ে চলে মাসব্যাপী। মেলায় সব ধরনের সামগ্রী পাওয়া গেলেও এর মূল আকর্ষণ ঘোড়া। এছাড়া ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী।জানা গেছে,প্রতিবছর দোলপূর্ণিমার দিন থেকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুরে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা বসে। এই মেলার মূল আকর্ষণ ঘোড়া। লোকমতে ৫ শত ১৬ বছরের পুরানো এই মেলা শুরু থেকেই ঘোড়ার জন্যই প্রসিদ্ধ ছিল। আগে মেলায় ভুটান, নেপাল, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসতো।বর্তমানে রাজশাহী, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঘোড়া ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আসেন এখানে ঘোড়া কেনা-বেচা করতে। এবার এ মেলায় বাহাদুর, মহারাজা, রানি, সুইটি, সোনার চাঁদ, সোনার তরীসহ হরেক রকম নামের ঘোড়া এসেছে। এখানে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৯ লাখ টাকার পর্যন্ত ঘোড়া রয়েছে। ক্রেতারা দেখেশুনে পছন্দ মত কিনছেন ঘোড়া। অন্যদিকে খোলা একটি মাঠে প্রতিদিন বিকেলে চলে ঘোড়ার দৌড়। মূলত ঘোড়ার খিপ্রতা পরীক্ষা করার জন্য এই প্রতিযোগীতা। যা উপভোগ করতে আসেন হাজার হাজার মানুষ।এ দিকে মেলায় ঘোড়া ছাড়াও গরু-মহিষ, গৃহস্থালি সামাগ্রী, মন্ডা-মিঠাইসহ নানা দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা।নওগাঁ থেকে মেলায় এসেছেন আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, বাড়িতে ঘোড়া পালন করি। আর প্রতিবছর এ মেলায় আসি ঘোড়া বিক্রি করার জন্য। আমার সবচেয়ে বড় ঘোড়ার নাম বাহাদুর। এটি তাজি জাতের একটি ঘোড়া। দাম চাচ্ছি ৯ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে মহারাজা নামে একটি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন আব্দুল বারী নামে একজন। তিনি বলেন, বড় ঘোড়া নিয়ে আসছি তিনটা ও ছোট ঘোড়া দুইটা। আমাদের সবচেয়ে বড় ঘোড়া মহারাজা। এর দাম ৭ লাখ টাকা। বিভিন্ন জন বিভিন্ন দাম বলছে, ৩ লাখ-৪ লাখ।এখন শেষ পর্যন্ত দেখি দামে হলে বিক্রি করবো।দিনাজপুর থেকে আসা মোশাররফ হোসেন বলেন, গোপীনাথপুর মেলা ঐতিহ্যবাহী একটি পুরাতন মেলা। আগে আমার বাপ দাদারা এ মেলায় আসতো। তারা মরে যাওয়ার পর আমি স্বাধীনতার সময় থেকে এ মেলায় আসি। বেচা হোক আর না হোক, প্রতিবছর এ মেলায় আসার একটা আনন্দ জাগে। কোন বছর বিক্রি হয়, আবার কিনি, আবার পরের বছর আসি।নওগাঁ থেকে আসা মোস্তাকিম নামে এক ঘোড়া বিক্রেতা বলেন, আগে আমার চাচা এ মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসতো। এখন চাচার সাথে আমিও আসি। আমার এখানে ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই লাখ টাকা দামের বিভিন্ন ঘোড়া আছে।আসলাম হোসেন নামে একজন বলেন, এই মেলায় বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া গেলেও মূল আকর্ষণ ঘোড়ার মেলা। মেয়েকে নিয়ে এসেছি। অনেক ঘোড়া দেখলাম। এছাড়া ঘোড়ার দৌড় দেখে অনেক ভাল লাগছে।মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, গোপীনাথপুর মেলাটি এবছর ৫১৬ তম বর্ষে পর্দাপণ করেছে। সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে এ মেলায় আসেন।মেলার প্রধান আকর্ষণ ঘোড়া। দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন জাতের ঘোড়া আসে এখানে। তবে ঘোড়ার মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন,কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের কমিটির লোকজনও কাজ করছে।আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, মেলায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply