কলমে- মিনতি গোস্বামী
আজ দুপুর থেকে ধনতরাসের তিথি পড়েছে। রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। সোনা রুপোর দোকানে ধনীদের ভিড়, মধ্যবিত্তদের ভিড় কাঁসা-পিতলের দোকানে। কিন্তু এসব কিনলেও সব মানুষ রাস্তায় হাঁটছে নারকেল কাঠির ঝাঁটা হাতে। মুদির দোকানে দোকানে, স্পেশাল ঝাঁটার দোকানে কাতারে কাতারে ভিড়। সবাই ঝাঁটা কিনছে। মেয়েরা তো ফেসবুকে ঝাঁটা হাতে ছবি দিয়ে রিলস ছাড়ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ, লক্ষ লক্ষ ঝাঁটা বিক্রি। এই ছবি এখন ভাইরাল।স্কুলের দিদিমণি থেকে কলেজের অধ্যাপিকা,ক্লিনিকের ডাক্তারনী থেকে কলেজ ছাত্রী, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত গৃহবধূ থেকে বস্তির মাসি সবাই ঝাঁটা কিনে বাড়ি ফিরছে। ঝাঁটা কেনার বহর দেখে একে ঝাঁটা দিবস বা ঝাঁটা উৎসব বলাই যায়। আমি ফেসবুকে ঝাঁটার ভাইরাল ছবি দেখে ভাবছি, যাক এবার সব দুর্নীতি, সমাজের সব জঞ্জাল ঝেঁটিয়ে বিদায় করার হয়তো সবাই শপথ নিয়েছে। ১৪ ই আগস্টের রাত দখলের মেয়েরা যদি এই ঝেঁটিয়ে বিদায় করার কাজটা করতে পারে, তবে সমাজের মঙ্গলই হবে।ঝাঁটা দিবসের পরের দিন কজন ব্যবসায়ী জ্যোতিষাচার্য তিমিরবরণ ও জ্যোতিষ বিশারদ কল্লোলের দরজায় হাজির হলো। তারা হাতজোড় করে বললো, ” গুরুদেব আপনার রেমিডি দারুন কাজে লেগেছে। এই দু বছর আমরা ঝাঁটা ব্যবসায় যা লাভ করেছি, তাকে ১০ বছর বসে খেতে পারবো। এখন তো ওই প্লাস্টিকের যুগ হয়ে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠেছিল। প্লাস্টিকের ঝাঁটা, ন্যাতা দিয়ে সবাই কাজ সারছিল ঘরের। “জ্যোতিষ বিশারদ কল্লোল বললেন,’ বেশ হয়েছে, কিন্তু আমাদের পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দাও বাপু। আমি এত বড় জ্যোতিষ, আর ভাই তিমিরও দুমাস ধরে টিভিতে লাইভ প্রচার করছি ঝাঁটা কিনে ভাগ্য ফেরাবার কথা। জনগণ বুদ্ধু। আরে বাবা ঝাঁটা কিনে কি কারো ভাগ্য ফেরে? জনগণ তো খুব কষ্টে আছে। দারিদ্র, বেকারি, হতাশা তাদের গ্রাস করছে। তাই আমরা কিছু বললেই এসব থেকে মুক্তি পেতে জনগণ এই রেমিডিগুলো লুফে নেয়।তোরা এসে বললি বাজার ডাউন হয়ে যাচ্ছে, তাইতো বুদ্ধি বের করলাম। যাক আমাদের পাওনা দে’।” এই নিন গুরুদেব ‘ বলে ব্যবসায়ি সমর গুরুদেবের হাতে পাওনা তুলে দিলো। ‘ এ কিরে, এতে হবে, বললেন তিমির বরণ। আরও কিছু দিতে হবে । দেখ তোদের মত নুনওয়ালারাও আমার কাছে এসেছিল। তাদের কথা ভেবে মানুষের কাছে এবার নুনের রেমিডি ও দিয়েছি।খোঁজ নিয়ে দেখ, কতশত মানুষ এবার নুন কিনেছে। নুনওয়ালারা কিন্তু আমাদের ভালো পয়সাই দিয়েছে।গুরুদেব আমাদের দেখবেন অন্য এক ঝাঁটা ব্যবসায়ী বলে “। তিমির বরণ বলেন,’ আরে আমরাও তো ব্যবসা করি। আমাদের হাতে যে বেশি পয়সা দেবে, আমরা তাদের সঙ্গেই থাকবো।
Leave a Reply