কলমে– মিনতি গোস্বামী
রঞ্জন অফিস থেকে এসে পর্ণাকে বলে, ” কি গো, বাড়িটা তোমার পছন্দ তো! তুমি খুঁটিয়ে দেখবে বলে তোমাকে দুপুরবেলায় যেতে বললাম “। হ্যাঁ, বেশ ভালো। বেডরুম দুটো খুব বড়। ডাইনিং আর রান্নাঘরটাও বেশ ভালো। বড় বড় জানালা, আলো, হাওয়াযুক্ত ঘর। আর সামনের বাঁধানো উঠোনটা ঠিক আমাদের গ্রামের বাড়ির মত। মাসিমা আর মেসোমশাই তো আমার সঙ্গে কথা বলে খুব খুশি। একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকে। কত বছর আসে না। দুই বুড়োবুড়ির কথা বলার লোক নেই। আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। বলেছে, পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিলেই হবে। দালাল তো আট হাজার টাকা বলেছিলো। ঠিক আছে, তাহলে কাল থেকেই সব প্যাকিং করো। মাস শেষ হতে আর সাত দিন বাকি।অক্টোবরের এক তারিখেই চলে যাবো “। তুমি তো বলেই খালাস। এইসব প্যাকিং করা কি সহজ ব্যাপার? বাসন-কোসন, বিছানা, জামাকাপড়, ঝাঁটা, ঝুড়ি সব তো নিয়ে যেতে হবে। ফুলের টবগুলোও নিতে হবে । আমার একদম ভালো লাগছে না এই বাসা বদল। সবাই বাড়ি কিনছে, তুমি একটা ফ্ল্যাট কিনতে পারলে না? পাঁচ বছর বিয়ে হয়েছে, এই নিয়ে তিনবার বাড়ি পাল্টানো হবে। রিন্টু আবার নতুন জায়গায় যাবে। ওর মন বসাতে সময় লাগবে। পাশের বাড়ির মাম্পির সঙ্গে ও কি সুন্দর খেলে। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না। তোমার এই যাযাবর জীবন কেন পছন্দ, আমি কিছুই বুঝতে পারি ন। পর্ণা, বাড়ি আমি করতে পারি কিন্তু করবো না। প্রথমত ৪০- ৫০ লাখ টাকার বাড়ি কিনে বেকার নষ্ট। ঐ টাকা ব্যাংকে রাখলে সুদ থেকে বাড়ি ভাড়া দিয়েও সংসার চলে যাবে। আর লোন করে বাড়ি করলে কুড়ি বছর ধরে লোন টানতে হবে। দ্বিতীয়ত বাড়ি কিনে হবেটা কি? যে ছেলেকে তুমি বড় করছো, সে বড় হয়ে অন্য রাজ্যে বা অন্য দেশে চলে যাবে। তখন বাড়ি বেচে আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে । আমাদের তো সঙ্গে করে নিয়ে যাবে না। এই বাড়ি বেচেই দেবে। তাই ভাড়া বাড়িতে থেকে এখন থেকে টাকা জমাই। বাঁশ ও থাকবে না, বাঁশি ও বাজবে না। বৃদ্ধ বয়সে ঘরের চিন্তা করতে হবে না। বৃদ্ধাশ্রমে মোটা টাকা দিয়ে আমরা দুজনে চলে যাবো। ছেলের কাছে এ জীবনে বোঝা হতে হবে না। বাসা যখন বদল করতেই হবে, তখন স্থায়ী বাসা বানানোর ঝুঁকি আর নিতে চাইনা পর্ণা “।
Leave a Reply