মিনতি গোস্বামী
শুভর বয়স মাত্র আড়াই বছর। এই বয়সেই সে সব কথা পরিষ্কার করে বলতে পারে। মায়ের মোবাইলে ইউটিউব খুলে রিলস দেখে। রিলস দেখে নিজে নিজেই নাচে। মা দোলনের একার সংসার।সে স্কুলে চাকরি করে। স্বামী অন্য শহরে কর্মরত। দোলনের স্কুল সকালে। ঐ সময়টা কাজের লোক নয়, তার পিসি এসে শুভকে দেখে আর তার রান্না করে দেয়। শুভ কিন্তু পিসি দিম্মাকে জ্বালায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দিম্মা খাইয়ে দিলে, শুভ নিজের মত খেলে। দিম্মা তাকে ফোন দেয় না। বই দেখিয়ে অক্ষর চেনায়। নানা রকম গল্প বলে। শুভ বাঘ ভালুক, ভূতের, বানরের গল্প শোনে আর হাততালি দেয়।শুভর জন্মদিনে শুভর মামা তাকে তিন চাকার সাইকেল দিয়েছে। শুভ মেঝেতে সাইকেল চালায় আর দিম্মার গায়ে লাগিয়ে বলে, এক্সিডেন। কথাটা বলেই হাততালি দেয় আর হাসে। দোতলার ঘরের সামনেই ছাদ। সে ছাদে সাইকেল চালায়। ছাদে ঘুরতে ঘুরতেই দিম্মার কাছে সে চিনে নিয়েছে ছাগল, গরু, কুকুর, হনুমান, পায়রা ও কাক।তাকে বাইরে মা খুব একটা বের করে না। তবু তার কথা শুনে মনে হয় সে সব জানে।স্কুল থেকে এসে নিজের স্নান করার সময় বা অন্য কাজ করার সময় দোলন ছেলের হাতে মোবাইল দেয়। মোবাইল দেখতে দেখতে শুভর মোবাইল দেখা নেশা হয়ে গেছে। ভাত খাওয়ার সময় মোবাইল না দিলে এক দানা ভাতও মুখে দেয় না।দোলন বুঝতে পারে, ভুলটা তার নিজের। তার পিসি তো শুভকে মোবাইল দেয় না। দোলন শুভর মোবাইলে আসক্তি কমানোর জন্য তাকে মাঝে মাঝে মোবাইলে দেয় না। কিন্তু শুভ এখন কান্নাকাটি করে, মোবাইল না দিলে ভীষণ বিরক্ত করে। দোলন তাকে মারধোর করে এখন ঘুম পাড়ায়। শুভকে ঘুম পাড়িয়ে দোলন ফোন দেখে অনেক রাত পর্যন্ত। কিন্তু সেদিন শুভকে ঘুম পাড়িয়ে দোলন কোথাও তার মোবাইল খুঁজে পেল না। পরদিন স্কুল থেকে এসে শুভকে যখন বলল মোবাইল হারিয়ে গেছে, শুভ বাবার পুরনো জুতোর ভেতর থেকে মোবাইল বার করে দিলো। মাকে বললো, ” ফোন পচা। তুমিও দেখবে না। ফোনটা ডাস্টবিনে ফেলে দাও। তুমি ফোন দেখলে আমি বাবাকে বলে দেবো “।
Leave a Reply