কলমে– মিনতি গোস্বামী
মাস তিনেক তীব্র দাবদাহ চলছে।আরাম পেতে সবাই বৃষ্টি বৃষ্টি করছিলো। আষাঢ়েও তেমন বৃষ্টি হয়নি। চাষীদের মাথায় হাত। শ্রাবণ মাস পড়তে অবশ্য দু ‘ একদিন ছাড়া ছাড়া বৃষ্টিতে একটু স্বস্তি আসে। পারুলরা বাঁকা নদীর ধারে বস্তিতে ঝুপড়ির ঘরে থাকে। গরমে গুমোট ঘর, বৃষ্টিতে একটু স্বস্তি হয়, মনে তাদের আনন্দ হয়। সারাদিন খাটা খাটনির পর বৃষ্টি এলে গুমোট কাটে, ঘুম ভালো হয়। কাল দুপুর থেকে কিন্তু এক নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি কমছে না দেখে পারুলের ভয় হয়। পারুলের স্বামী খোকন বলে, ” ভয় করিস না, নদী নালা সব শুকিয়ে গেছে।এই বৃষ্টিতে কিছু হবে না। ” কিছু হবে না বললেও পারুলের ভয় লাগে । বৃষ্টি তো থামছেই না।তবে কি তাদের ঘরে আবার জল ঢুকে যাবে, আবার ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হবে স্কুল ঘরে? সারারাত বৃষ্টি থামেনি। সকাল হতে বৃষ্টি আরো বাড়তে থাকে।ছেলে নন্টু এসে খবর দিলো, ” নদীতে জল বেড়েছে। ” দেখতে দেখতে তাদের দুয়ারে জল। পারুল হাঁড়ি,বাসন,বিছানা গুছিয়ে তক্তাপোষে তোলে। ততক্ষণে ঘরে জল ঢুকে যায়। খোকন রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাংকের পাস বই গুছিয়ে বাইরে যায়। হঠাৎ তার হাত থেকে সবকিছু জলে পড়ে যায়। সেগুলো খুঁজতে খুঁজতে জলের তোড়ে ভেসে যায় সব। ক্লাবের ছেলেরা ইতিমধ্যে তাদের উদ্ধার করতে চলে আসে। পারুল স্বামী আর ছেলের সাহায্যে ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে স্কুল ঘরে ওঠে। চোখের সামনে কত দরকারী জিনিস ভেসে যায়। পাড়ার সবার চোখেই উদ্বিগ্নতা।সবার জিনিস ভেসে যাচ্ছে। গোটা সংসার কি তুলে আনা যায় মুহূর্তের মধ্যে?পারুল বলে,” যাদের নদীর ধারে বাস, তাদের বছর বছর সর্বনাশ। ” খোকন বলে, ” বাবা ও পারেনি,আমিও পারলাম না, অন্য কোথাও একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে, আমাদের এই দুর্গতি সইতেই হবে। ”
পারুল বলে, ” ওসব ভেবে লাভ নেই। এখন প্রাণে বাঁচো , তারপর আবার নতুন করে শুরু করতে হবে লড়াই। ভেসে যাওয়া ঘর আবার সাজাতে হবে নতুন করে। আমরাই তো বিশ্বকর্মা, সারা জীবন গড়েই যাই। সব সর্বনাশের মোকাবিলা করি জীবন ভর।
Leave a Reply