কলমে– মিনতি গোস্বামী
” ও ঠাম্মী, ঠাম্মী, আমি রথ দেখতে যাবো। বাবা বলেছে মেলা বসবে। তুমি আমাকে কাল রথের মেলায় নিয়ে যাবে?” পাঁচ বছরের গোলু বিকাল থেকেই ঠাম্মীর সঙ্গে ঘুরঘুর করছে কাল রথের মেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।ঠাম্মী সুমনাদেবী বলেন ‘ না, আমি যাবো না।বাবাকে বলো নিয়ে যাবে। ‘ বাবা সৈকত নাতি ঠাম্মীর কথা শুনতে পেয়ে বলে,, ” না মা আমি নয়।তুমিই কাল ওকে নিয়ে যাও । তোমার রান্নাঘর কেয়া সামলাবে। আমার ঠাকুমা আমাকে নিয়ে যেতো মনে নেই, তুমিও তো যেতে। তুমিই ওকে নিয়ে যাও। ” অবশেষে সুমনাদেবী রাজী হলেন।সকালে স্নান সেরে নতুন শাড়ি পরে , নাতিকে নতুন জামা পরিয়ে, টোটোয় চাপিয়ে নিয়ে গেলেন রথ দেখাতে । বর্ধমানের লক্ষ্মী নারায়ণ জিউয়ের মন্দিরে রাজবাড়ীর পেতলের রথ রাজার আমল থেকে রাখা আছে। সেই রথই প্রতি বছর এখনো ঘষে মেজে সাজানো হয়। মন্দিরের উঠোনেই রথ টানা হয় খুব সকালে। রথে জগন্নাথের মূর্তি রাখা থাকে। ওখানেই সবাই পুজো দেয়। সুমনাদেবী জগন্নাথের পুজো দিয়ে, নাতিকে রথের রশি ধরিয়ে দিয়ে দুজনে টানলেন। মনটা তার হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল।চল্লিশ বছর আগে বর্ধমান শহরে বউ হয়ে এসেছিলেন। স্বামী প্রথমবার রথের মেলায় এনেছিলেন। রথের রশি টানার পর মেলায় এক হাত কাঁচের চুড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন। দুজনে একসঙ্গে নিরামিষ ঘুগনি, পাঁপড় আর জিলিপি কিনে খেয়েছিলেন। সে কি অপূর্ব অনুভূতি। তখন এই ঠাকুরবাড়িতে অনেক মেলা বসতো। মাটির পুতুল, খেলনা, চুড়ি, নানা রকম খাবারের দোকান, তালপাতার পাখা, তালপাতার ভেঁপু, বেতের মোড়া , ঝুড়ি, পেতে, কুলো বিক্রি হতো। ঝমঝম বৃষ্টিতে ভিজে সরমাদেবী দুটো ঝুড়ি কিনেছিলেন সেদিন শাশুড়ির তরকারি ধোয়ার জন্য। নতুন বৌয়ের সাংসারিক বিবেচনায় সেদিন শাশুড়ি খুব খুশি হয়েছিলেন। গত দু’বছর আগে এক অজানা রোগে সুমনাদেবীকে ফেলে স্বামী চলে যান পরপারে।
স্বামীর উদ্দেশ্যে সরমাদেবী মনে মনে বলেন, ” তুমি নাতিকে শুধু চোখেই দেখলে, তুমি তো পারলে না, দেখো, তোমার নাতিকে আমি মেলা দেখাতে নিয়ে এসেছি। ওকেও জিলিপি, পাঁপড় খাইয়ে, খেলনা কিনে দিয়ে বাড়ি ফিরবো। তুমি শুধু উপর থেকে ওকে আশীর্বাদ কোরো । ও যেন তোমার আর তোমার ছেলের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। “
Leave a Reply