কলমে– মিনতি গোস্বামী
পটাশপুর গ্রামের উচ্চ -মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। রাজ্যে কাজের সুবিধা নেই বলে অল্প বয়সেই ছাত্ররা ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে কাজের খোঁজে, আর ছাত্রীরা স্কুলে যেতে চাইছে না,। তারা মা বাবার সঙ্গে মাঠের কাজ, লোকের বাড়ির কাজে চলে যাচ্ছে। পটাশপুর গ্রামটি মূলত আদিবাসী ও তপশিলি অধ্যুষিত।স্কুল কি করে থাকবে,স্কুলের পরিচালক মন্ডলীর এ নিয়ে এখন দারুন মাথা ব্যথা। পরিচালন কমিটি মিটিং ডেকে নীচু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের আবার স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে বলেন সবাইকে। ঠিক হয় সপ্তাহে দুদিন শিক্ষক-শিক্ষিকারা টিফিনের পর অফ পিরিয়ড দেখে পালা করে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে যাবেন, বুঝিয়ে সুুঝিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনবেন। যারা এখনো কোথাও যায়নি, তাদের ফিরিয়ে আনতেই হবে।কৃষ্ণাদি ও মীরাদি সেদিন আদিবাসী পাড়ায় গেলেন। কমলা টুডু ও বিমলা টুডু দুই বোন ঐ স্কুলেই পড়ে। বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, মাঠ থেকে কাজ সেরে এসে তারা খেতে বসেছে। কৃষ্ণাদি বললেন, ” কি রে, তোরা স্কুলে যাস না কেন? তোদের তো দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। তোরা এই বয়সে লেখাপড়া ছেড়ে দিবি? “‘কি হবে, বড় ভাই তো মাধ্যমিক পাস করলো। ওকে কেরালা যেতে হলো।’
” ও তো ছেলে, মানলাম কাজের খোঁজে গেছে। তবু কিছুটা তো শিখেছে। তোরা তো মেয়ে। লেখাপড়া শিখলে, আগামীতে তোদের সন্তানদের শেখাতে পারবি। তোর মা বাবা সুযোগ পায়নি। তোরা তো পাচ্ছিস। তোরা লেখাপড়াটা কর।কমলার বাবা ধুঁকতে ধুকতে এসে বলে, ” মুকে রোগে ধরেছে, কাম কাজ পারি না। তাই বিটি দুটো উদের মায়ের সঙ্গে খাটতে যায় ,। আমি চাই না বাঁচতে। দিদিমণি, উদের লিয়ে যা ইস্কুলে। ওরা চোখ থাকতে যেন আঁধার না দেখে। মুরা না থাকলে ওরা যেন ভালো মন্দ বুঝতে পারে।তোরা ভালোবেসে সবার ঘরে যা, সবাইকে বুঝা।সবাই ঠিক বুঝবে। লেখাপড়ায় মড়ক লেগেছে।মুরা নাইট ইস্কুলে পড়তাম বটে। লেখাপড়া কাকে বলে জানি। ইরা এখন বুঝতে চায় না। তোরা সবাইকে বুঝিয়ে ইস্কুলে লিয়ে যা। আলোর দিশা তো তুরাই দেখাতে পারিস।”
Leave a Reply