কলমে–গোলাম কিবরিয়া খান
অলস দুপুরে সেলিম ভাই ফোন করে বললেন, তোমার পূর্ব খুকশিয়া গ্ৰামে যমুনা নদীর একটা জায়গায় খুব মাছ ধরা পড়ছে, চলো তোইরা জাল (ঝাঁকি জাল) নিয়া যাই, তোমার কিছুই করা লাগবেনা, শুধু মাছের ব্যাগ ধইরা থাইকো। এমন সুবর্ণ সুযোগ হারায় কে! তাছাড়া জম্ম, শৈশব, কৈশোর কাটিয়ে যৌবনের প্রারম্ভে রাক্ষুসী যমুনায় বিলীন হতে দেখা প্রিয় গ্ৰাম আমার। সামান্য চর জেগেছে, তাতেই হাজারো স্মৃতির ভীড়ে হারিয়ে যাওয়ার ব্যাকুলতায় বললাম চলেন। প্রস্তুতি নিতে বাড়িতে গেলাম। আমি মাছ ধরতে যাবো শুনেই পরিবারের সদস্যদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ মাখা বাক্যগুলো এরকম হয়ে গেলো যে, এই সেরেছে আজ নদীতে মাছ আছে তো! নাকি ছুটিতে গেছে! এর যথার্থ কারণ হচ্ছে আমি জীবনে যতবার মাছ ধরতে গেছি ততবার খালি হাতে….! মাঝে মাঝে পাশের শিকারিরা সহানুভূতি দেখাতো। আমি জানি সেলিম ভাই জীবনে অনেক অনেক মাছ ধরেছেন, দেখা যাক। কূল থেকে প্রায় ২০০ গজের একটা অথাউ নালা সাঁতরিয়ে আমরা
মাছ ধরার জন্য উপযুক্ত স্থানটিতে পৌঁছালাম। শুরু হলো জাল ফেলা, পঞ্চমবার জাল ফেলার পর প্রথম আমরা মাছের দেখা পেলাম, ২ ইঞ্চি সাইজের বাইলা মাছ মনে হয় ভুল পথে এসেছিলো। সেলিম ভাইকে উৎসাহিত করতে গ্ৰামের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে নিজেই এক সময় উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। ততক্ষনে ১৫/১৬ বার জাল ফেলা হয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য, এবার সেলিম ভাই উল্টো আমাকে হতাশ হতে বারণ করলেন। হঠাৎ পাশের গ্ৰামের একটা ছেলে গোসল করতে এসে আমাদের খোঁজ খবর নিলো, ও থাকতে আরো ২ টা মাছ পেলাম আমরা, একটা বাঁশপাতারি আরেকটা ফেসরা মাছ, দুটোই সর্বোচ্চ ৩ ইঞ্চি হবে, আবার বিপুল উৎসাহে জাল ফেলা শুরু, ৩৫ থেকে ৪০ বার জাল ফেলার পর ১ইঞ্চি সাইজের একটি চিংড়ি মাছ ছাড়া কিছুই হলোনা। আমাদের মাছের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচে আর ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়েছে চরমে। অবশেষে সেলিম ভাই জীবনের অনেক মাছ শিকারের স্মৃতি থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, জাল ধুয়ে নিয়েছি চলো আর হবেনা। আমি বললাম আর একবার ফেললে একটা ছবি তুলবো, ধৈর্য্য আছে? রাজি হয়ে জাল ফেললেন তিনি, মোবাইলের ক্যামেরায় একটি মাত্র ক্লিক করার সুযোগ পেলাম, রিভিউ দেখে বললাম ভাই ধরছি, তিনি বললেন কি? দেখেন। দেখে বললেন এতো ক্যালেন্ডারের ছবি! মাঝে মাঝে ভালো ছবি হয়ে যাওয়া হঠাৎ ফটোগ্রাফারের জন্য বিশাল প্রেরণা মনে হলো। মাছ ধরার ব্যর্থতা প্রায় ভুলেই গেলাম, ফেরার পথে শুধু মনে হলো, আমিতো আমার মনের একটা খোরাক পেয়েছি, কিন্তু সেলিম ভাই যার প্রধান সখ মাছ ধরা, কৈশর থেকে মাঝ বয়স পর্যন্ত ৪ যুগে নদী নালা খালে মাছ ধরতে এসে ব্যর্থ হননি! আজ আবার কেনো সত্যি হলো মাছ আর আমার দুরত্ব যোজন যোজন।
Leave a Reply