রুহুল আমিন রুকু,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এই ধাপের নির্বাচনে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় পুনর্র্নিবাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন। নাগেশ্বরী উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্য কে এম মহিবুল হক খোকন। আর ফুলবাড়ীতে বিজয়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ এজাহার আলী। রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ পূবণ আখতার নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বড় ব্যবধানে আবারও বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান মেয়াদের চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন। ঘোড়া প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৭৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ফরিদুল হক (শাহীন শিকদার) মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৫৬২ ভোট। নাগেশ্বরী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা জাপা সদস্য কে এম মহিবুল হক খোকন। দল ও দলীয় সংসদ সদস্যের সমর্থন ছাড়াই তিনি পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৬৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৪০ হাজার ১৯৯ ভোট। ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন মো. এজাহার আলী। ঘোড়া প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২৭ হাজার ৬২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৫ হাজার ৬৪২ ভোট।
উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। তিন উপজেলাতেই জেলার ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন দলের পেছনের সারির নেতারা। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন মোঃ মনজুরুল ইসলাম রতন। আনারস প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৬০ ভোট। রতন জেলা আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাফর আলীর ছেলে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু পেয়েছেন ৩০ হাজার ৫১৪ ভোট। জেলার কেন্দ্রবিন্দু এই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫। প্রদত্ত ভোটের হার ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ গোলাম হোসেন মন্টুকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোঃ সাজাদুর রহমান তালুকদার ওরফে সাজু তালুকদার। আনারস প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার ৪৬৪ ভোট। সদ্য শেষ মেয়াদের উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রভাবশালী নেতা গোলাম হোসেন মন্টু পেয়েছেন ১৪ হাজার ৬৯৩ ভোট। তিন লাখ ৫২ হাজার ৭৮০ ভোটারের উলিপুর উপজেলায় প্রদত্ত ভোটের হার ছিল মাত্র ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। রাজারহাট উপজেলায় নিজ চেয়ার ধরে রেখেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুনুর মো. আক্তারুজ্জামানকে পরাজিত করেছেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের এই সদস্য। মোটরসাইকেল প্রতীকে জাহিদ ইকবাল পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৩৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবুনুর মো. আক্তারুজ্জামান আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৭৩ ভোট। এই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫১। প্রদত্ত ভোটের হার ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের পর প্রাপ্ত ফলাফলে তিন উপজেলার দুটিতে নিজেদের চেয়ার ফিরে পেয়েছেন সাবেক দুই চেয়ারম্যান। বুধবার (৮ মে) ভোট শেষে রাত সাড়ে ১১টায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের বেসরকারি ফল ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলমগীর। ঘোষিত ফল অনুযায়ী চিলমারীতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন সদ্য সাবেক হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. রুকুনুজ্জামান শাহীন। চর রাজিবপুর উপজেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম। চিলমারীর পুনর্নিবাচিত চেয়ারম্যান মোঃ রুকুনুজ্জামান শাহীন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। জাপা নেতা শাহীন পেয়েছেন ২৮ হাজার ৬০৫ ভোট। আর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৩৪ ভোট। চর রাজিবপুরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। তিন ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ছোট এই উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যেন ‘ভোট উৎসব’ ফিরে এসেছিল উপজেলাটিতে। এক মেয়াদ বিরতি দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা মো. শফিউল আলম পেয়েছেন ১৭ হাজার ৭৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. আরিফুল কবির তালুকদার রানা প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে পেয়েছেন ১৭ হাজার ৩৮৬ ভোট। তবে রৌমারী উপজেলায় পরিবর্তন এসেছে। এখানে ২৪ হাজার ৫০৪ ভোট পেয়ে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম শালু। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া এই আওয়ামী লীগ নেতা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মজিবুর রহমান বঙ্গবাসীকে মাত্র ২৫১ ভোটে পরাজিত করে পরিষদের দায়িত্ব পেয়েছেন। এই উপজেলার আরেক প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইমান আলী পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৫০ ভোট। দলের নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতির পদও হারিয়েছেন এই প্রার্থী। রাজারহাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন অজয় কুমার সরকার। তার প্রদত্ত ভোট ৩১ হাজার ৯০৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, নাজমুল হুদা নাজু টিউবওয়েল প্রতিক,১৬,৪৪৫ ভোট। আশিকুল ইসলাম মন্ডল সাবু, মাইক প্রতীক নিয়ে ৯ হাজার ০৪১ ভোট। আব্দুল ওয়াহেদ সরকার তালা প্রতীক নিয়ে ৮ হাজার ৭১২ ভোট। এদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাঁস প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ফারজানা আক্তার। তার প্রদত্ত ভোট ২৯ ২৯ হাজার ৭৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফুটবল প্রতিক নিয়ে মাধবী রানী পেয়েছেন ২৩ হাজার ৭৯৬ ভোট। কোরাইশী লায়লা ফেরদৌসী কলস প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ২৭৪ ভোট। মোছাঃ রতনা বেগম ফ্যান প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৮০৩ ভোট। উলিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সরকার এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মতি শিউলী জয়ী হয়েছেন।
Leave a Reply