শান্ত খান,ঢাকা জেলা প্রতিনিধিঃ
ঢাকা আরিচা মহাসড়কের গেন্ডা বাস স্ট্যান্ড ব্রিজের নিচের পাশে কাঠের বেঞ্চ নিয়ে একটু আড়ালেই দলবদ্ধভাবে বসে আছেন কয়েক যুবক। হাতে রয়েছে কয়েক রকমের রসিদ ও কলম। মালবাহী ট্রাকসহ ছোট-বড় যেকোনো যানবাহন দেখলেই দৌড়ে এসে হাত মেরে জোরপূর্বক মহাসড়কেই থামিয়ে দিচ্ছেন চলন্ত যানবাহনকে। তারপর একটি রসিদ দিয়ে চালক ও তার সহকারীর কাছ থেকে টোলের নামে আদায় করা হচ্ছে টাকা। সেই রসিদে নাম লিখা রয়েছে ইজারাদারের। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ বা দেরি হলেই চালকের সঙ্গে মারমুখী আচরণ ও দীর্ঘসময় গাড়ি আটকে রাখছেন তারা। সম্প্রতি এভাবেই প্রকাশ্যে সাভার পৌরসভার টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির দেখা মিলেছে গেন্ডা বাস স্ট্যান্ড এলাকায়।জনা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি ১৪ তারিখ এক কোটি ৮৩ লাখ টাকায় পৌরসভা থেকে টোল আদায়ের নামমাত্র ইজারা পান মো আব্দুল কুদ্দুস। সেই ইজারাদারের নামেই গেন্ডা বাস স্ট্যান্ড মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় কয়েকজন কয়েকদিন ধরে এ চাঁদা আদায়ের কাজ করে আসছেন। প্রতিটি মালবাহী ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, থেকে ১০০ টাকা করে প্রতিদিন কয়েকশত যানবাহন থেকে হাজার হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়। সেই হিসাবে মাসে কয়েক লাখ টাকা ও বছরে কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। তবে রাত হলে নির্ধারিত টাকার থেকে বেশি চাঁদা এবং অনেক সময় রসিদ ছাড়াই চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ অধিকাংশ চালকের।অথচ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকার সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে ইজারার নামে টোল আদায় বন্ধে হাইকোর্টে রিটের প্রেক্ষিতে মেয়রদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে টার্মিনাল ব্যতিরেকে কোনো সড়ক বা মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে টোল আদায় না করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সেই নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদে থাকা ওয়ার্ড পর্যায়ের বেশ কয়েক নেতার নেতৃত্বে সড়কে যানবাহন থামিয়ে পৌরসভার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনেরও নীরব ভূমিকা দেখা গেছে।
বেশ কয়েক ট্রাকচালকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পৌরসভার নাম করে ইজারাদারের লোকজন সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। সাভারে আসার আগে শহরে দুই শত টাকা দিয়েছি। সারা বছরই তারা এভাবে চাঁদা আদায় করেন।আদায়কারীদের সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমরা পৌরসভার নির্ধারিত ইজারাদারদের নিয়োগকৃত শ্রমিক হিসেবে এ টাকা তুলছি। তবে এ টাকা কোথায় যায়, কী কাজে ব্যবহার হয় তার কিছুই জানি না।রসিদে উল্লিখিত সাভার পৌরসভার ইজারাদার মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পৌরসভার নিয়মের যা আছে সেভাবে টাকা উঠায়। চাঁদা তোলা এটা কোন গোপনের বিষয় না এটা প্রকাশ্যে। এটা কোন চুরি চোরটার কিছু নাই আমার কাছে ডকুমেন্টস আছে।এ বিষয়ে সাভার পৌরসভার মেয়র আব্দুল গণির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মহাসড়কে চাঁদাবাজির অনুমতি দেয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আপনি এসে দেখে যান যে ইজারাদার আছে, তার সাথে আমাদের কি চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তিপত্রটা আপনারা দেখে যান। তাহলেই বুঝতে পারবেন যে মহাসড়কে চাঁদাবাজি করার জন্য দিয়েছি নাকি কি করার জন্য দিয়েছি সেটা দেখতে পারবেন। যে জন্য দিয়েছি সে সব চুক্তি পত্রের ভেতর লেখা আছে। তিনি বলেন, পত্রিকায় একটা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেটার সাথে মিল রেখে এই চুক্তিপত্র করা হয়েছে। সাবাইকে আমি একটা করে কপি দিয়ে দিবো চুক্তিপত্রের।
Leave a Reply