কাজী মোস্তফা রুমি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলায় বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস ওঠা মানুষ বিদ্যুতের সেবা থেকে বঞ্চিত। দিনে সূর্যের তেজ আর রাতে ভ্যাপসা গরমে অসহনীয় অবস্থায় সময় পার করছে মানুষ। প্রচন্ড গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে খেটে খাওয়া মানুষের শান্তি নেই।গত সপ্তাহ জুড়ে চলছে টাঙ্গাইলে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত। মানুষের সঙ্গে প্রাণিকূলের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। জমিন শীতল হতে প্রকৃতির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রাণীকূল।আসন্ন ঈদুল ফিতরে বেশি বিপাকে পড়েছেন সকল ধরনের ব্যবসায়ীরা।শিল্প-কারখানায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। প্রচন্ড দাবদাহ আর দিনের বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বেচা-বিক্রি ব্যাহত হচ্ছে।সকাল ৭টার পর থেকে সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। দুপুরে তীব্রতা আরও বেশি।রোজাদারের জন্য কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রচণ্ড এ গরমে সবচেয়ে বিপদে আছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রোদে তাকালেই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। টানা গরম আর অনাবৃষ্টিতে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। ঠিক এমন বৈরী পরিস্থিতিতে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে ঘন ঘন লোডশেডিং। লোডশেডিং হলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবার মতো অবস্থা। শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি।বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় জেলাজুড়ে বারবার লোডশেডিং চলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস।গতকাল বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার দিনে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ বার লোডশেডিং হয়েছে।জানা গেছে,টাঙ্গাইল জেলার ১২ টি উপজেলার মধ্যে টাঙ্গাইল জোনে ৭ টি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জোনে ৫টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে পল্লী বিদ্যুৎ। টাঙ্গাইল জোনের জোনাল অফিসের আওতাধীন ৬ লাখের বেশি বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে। অপরদিকে ময়মনসিংহ জোনাল অফিসের আওতায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এছাড়া জেলায় ছোট বড় ৮ শতাধিক শিল্পকারখানাও রয়েছে। এসব শিল্পকারখায় ৫ লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, জেলায় গত কয়েকদিন যাবত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।বিদ্যুৎ সঞ্চালন বিভাগ সূত্রে জানা যায়,জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা আবাসিক ও শিল্পকারখানাসহ প্রায় ১১ লক্ষ গ্রাহক রয়েছে। গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২২০-২৫০ মেগাওয়াট,এর বিপরীতে ১৩০-১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।ভয়াবহ এই লোডশেডিংয়ে টাঙ্গাইলের একমাত্র শিল্পাঞ্চল খ্যাত মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের মিল কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া এই গরমে শিশুরা সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।জেলার সদর উপজেলার রেজিস্ট্রি পাড়া এলাকার বাসিন্দা ইমাম হোসেন জানান, প্রচন্ড দাবদাহে বাসায় থাকা যায় না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ । শিশুরা অসুস্থ হয়ে পরছে। তারা জ্বর, সর্দি-কাশিসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।সদর উপজেলার হিরা মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মোসলেম উদ্দিন জানান, ক্রেতার চাপ থাকলেও প্রচন্ড গরমে দোকানে বসে থাকা যাচ্ছে না। আবার চলছে প্রচন্ড লোডশেডিং। আইপিএস লাগিয়েও সমাধান পাচ্ছি না।বিদ্যুৎ না থাকলে আইপিএসও সাপোর্ট দিতে পারে না।টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান মিরন জানান- টাঙ্গাইল শহর এলাকাতেও প্রতিদিন ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিবার এক থেকে দেড় ঘন্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না।বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার কামরুজ্জামান জানান- টাঙ্গাইল পৌর এলাকায় ৪৭ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। বিদ্যুতের চাহিদা ২০ মেগাওয়াট। গত সপ্তাহ পর্যন্ত গ্রাহকের চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক ছিলো। ৩/৪ দিন হতে আমরা ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছি। আমাদের ঘাটতি ৮ মেগাওয়াট। এই ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন কম পাচ্ছি এ বিষয়ে আমি অবগত নই।
এ ব্যাপারে পল্লীবিদ্যুৎ টাঙ্গাইল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, আমি সম্প্রতি টাঙ্গাইল জোনে যোগদান করেছি। আমাদের এ জোনে গ্রাহক সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক। এ এলাকায় ছোট বড় মিলে ৪৫০ শিল্পকারখানাসহ ও আবাসিক গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৬০-১৬৫ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ১০০-১০৫ মেগাওয়াট। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে।পল্লীবিদ্যুৎ ময়মনসিংহ জোন অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. শহীদ উদ্দিন জানান- প্রচণ্ড দাবদাহে সারাদেশে লোড বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সর্বোচ্চ লোড চলছে। তার অফিসের আওতায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। বিদ্যুতের চাহিদা ৫৫ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট।
Leave a Reply