নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলার হাটে-ঘাটে, অলি-গলিতে পাড়া মহল্লায় বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিয়ার ও ইয়াবাসহ মাদকের ভয়াবহতা। যেকোন সময় হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মরণ নেশা মাদক। মাদকের ভয়াল থাবায় জড়িয়ে বিপদগামী হয়ে পড়ছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ যুব সমাজ ও উঠতি বয়সের তরুনরা। বাদপড়ছেননা সম্ভ্রান্ত মুসলি পরিবারের ছেলেরাও। মাদকের করাল গ্রাস থেকে এখনই সোনারগাঁয়ের যুবকদের রক্ষা করতে না পারলে অচিরেই মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানিয় সচেতন জনগোষ্টি।মাদক প্রতিরোধে সম্প্রতি স্থানিয় এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত , উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের ভূমিকায় জনমনে অনেকটা আশার আলো জেগেছিল। কিন্তু থানা পুলিশের করা ত্রুটিপূর্ণ ১০ টি ইউনিয়ণ ও একটি পৌরসভার ৫৫৯ জন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীর নামের তালিকা প্রকাশের ফলে জনমনের আশার আলো নিবু নিবু করছে। সোনারগাঁয়ে মাদক বিক্রির মূল হোতাদের (মাদক সম্রাট) সাধারণ মানুষ ও মিডিয়া কর্মীরা চিনলেও পুলিশের তালিকায় তাদের নাম না থাকায় সোনারগাঁবাসী বিস্মিত ও হতাসা প্রকাশ করছেন। মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকলেও মূল অপরাধী ও নাটের গুরুরা রয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।সনমান্দী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লুৎফা বেগম বলেন, বারুদী গ্রামের পাশের বিলে তাবু টানিয়ে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও বিক্রি হচ্ছে।শম্ভুপুরা এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, তার এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি। পুলিশ আটক করার পর আবার উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে।সাংবাদিক মাহাবুবুল ইসলাম সুমন বলেন, পুলিশ সাদা পোশাকে সোর্সের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে। সোর্সরাই ইয়াবা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে আটক করিয়ে কিছুক্ষন পরে ছাড়িয়ে নেয়।পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য রুনা বেগম বলেন, শুধু পুরুষ নয় নারীরাও মাদকের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে।বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুরাইয়া বেগম বলেন, তার এলাকায় সন্ধ্যার পর পর এক দল যুবক পেয়ারা বাগানে ইয়াবা সেবন করে। পরে রাতের বেলা তারা চুরি, ছিনতাই করে বেড়ায়।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে ,চট্টগ্রাম, বি-বাড়ীয়া ও কুমিল্লা সীমান্ত পথ দিয়ে ভারত থেকে আসা বিভিন্ন প্রকারের মাদকের চালান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি গোমতি ও মেঘনা সেতু এলাকা এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রীজ হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর ও উপজেলা সদর ও রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়।অন্যদিকে চট্টগ্রাম সীমান্ত পথ দিয়ে মায়েনমার (বার্মা) থেকে আসা বিভিন্ন মাদকের চালান গুলোও একই ভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রীজ হয়ে চলে যায় রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সহ আশপাশের জেলা গুলোতে। এভাবে প্রতিদিন মেঘনাঘাট ও কাঁচপুর পয়েন্ট দিয়ে আসছে লাখ লাখ টাকার মাদকের চালান। এর ফলে কাঁচপুর এলাকাসহ সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট হয়ে উঠেছে মাদকের স্বর্গরাজ্য।এ সকল স্পটের খোলা ময়ধানে, কবরোস্থানের পার্শ্বে ও ঈদগাহ এর আসপাশে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন সহ সকল প্রকারের মাদক সন্ধ্যার পর পর বেচা কেনা শুরু হয়। মাদকের এই সহজলভ্যতার কারণে এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদেরকে নিয়ে তাদের অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তার উপর নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলেন, কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরাই মাদকের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশ সঠিকভাবে কাজ করলে মাদক নির্মূল হবে। তাহলে পুলিশের আর কোনো সোর্সের প্রয়োজন হয়না। সকলকে সচেতন হয়ে প্রতিটি সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে। সোর্সরা নিজেদের এসপি, ডিসি, আইজিপি মনে করেন। মাদকের নিয়ন্ত্রন করে সোর্স। থানার ভাবমূর্তি নষ্ট হয় তদবিরকারীদের জন্য। সম্প্রতি তিনি সোনারগাঁ থানার আয়োজনে ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানা প্রকার অপরাধ, অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। তাই এলাকার যুব সমাজকে এই মরন নেশা থেকে মুক্ত করার জন্য প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরও তৎপরতা বাড়ানোর জন্যে আহবান জানান মাদকাসক্ত তরুন যুবকদের অভিভাবক ও সচেতন মহল।এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে মাদক বিরোধী প্রচার-প্রচারণা, সভা, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে মাদকের কুফল সম্পর্কে এলাকাবাসীকে সচেতন করে তুললে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে বিরত রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
সোনারগাঁ থানার (ওসি) রেজাউল করিম জানান, ইতোমধ্যেই অনেক মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং তাদের মাদক স্পটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও আদালত থেকে তারা সহজেই জামিন পেয়ে পুনরায় একই পেশায় নিয়োজিত হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা সচেতন হলে এবং থানা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলেই মাদকের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের কঠোরভাবে দমন করে মাদক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
Leave a Reply