দেলোয়ার,সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অব্যাহতি প্রাপ্ত এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে স্বামী পরিত্যাক্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬৮ বছর বয়সী এক নারীর জমি জাল দলিলের মাধ্যমে দখলের অভিযোগ উঠেছে। সোনারগাঁও পৌরসভার ছাত্রলীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খাঁন সাজু ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে। গত কয়েক মাস ধরে বায়না সূত্রে মালিক দাবি করে সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে ৮ শতাংশ এ জমি দখল করেন। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে কয়েক দফায় বিচার সালিশে মায়া রানী বিশ্বাসের পক্ষে জমির দলিল পত্র ও রায় হলেও প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক তারা দখল করে নেয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে মায়া রানী বিশ্বাস বিষয়টি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার ওই নারীকে সাংসদের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে নারীর বাড়িতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিয়য়টি বিশদ অবগত হন। এক পর্যায়ে ওই নারীকে তার জমি বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে রাতের আধারে ছাত্রলীগ নেতার সাঁটানো সাইনবোর্ড নিজেরাই সরিয়ে নেন। বুধবার সকালে সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই নারী ও এলাকাবাসী। সরেজমিনে ওই বাড়িতে গেলে ভূক্তভোগী নারী মায়া রানী বিশ্বাস জানান, উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভার দরপত পশ্চিমপাড়া গ্রামে তার নানার বাড়ি। তার নানা গঙ্গা চরণ বিশ্বাসের তিন ছেলে এক মেয়ে। তার মামা মনা চরণ বিশ্বাস ও ধনা চরণ বিশ্বাস তার বাবার ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক হয়ে তার বোন রায় ধ্বনি বিশ্বাসকে ১২ শতাংশ জমি লিখে দেন। আরেক মামা জয় চন্দ্র বিশ্বাস ৬ শতাংশ জমি স্থানীয় আবুল হোসেনের কাছে বিক্রি করে দেন। ওই ৬ শতাংশ জমি আবুল হোসেন পুনরায় মায়া রানী বিশ্বাসের কাছে বিক্রি করে। মা রায় ধ্বনি বিশ্বাসের কোন ছেলে সন্তান না থাকায় মেয়ে হিসেবে মায়া রানী বিশ্বাস ওই সম্পত্তির মালিক হন।দরপত্র ঠোঠালিয়া মৌজায় আর এস ৫৬২ দাগে তা মা ওয়ারিশ ও ক্রয় সূত্রে ১৮ শতাংশ জমি মালিক হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করে আসছেন। ১৯৭৪ সালে মায়া রানীকে স্বামী তালাক দিলে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। গত কয়েক বছর ধরে গোয়ালদী হরিশপুর গ্রামের আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী জহিরউদ্দিন ও রাইজদিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন ওই জমি ১৯৮২ সালে জয় চন্দ্র বিশ্বাসের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন এমন অজুহাতে দখলের চেষ্টা করে। এ নিয়ে বিচার সালিশ হয়। সেখানে জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ওই জমি ১৯৭২ সালে আবুল হোসেনের কাছে জয় চন্দ্র বিক্রি করে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। ফলে কেনা জহিরউদ্দিন ও ইসমাইলের পক্ষে রায় আসে না।সম্প্রতি জহিরউদ্দিন মারা যাওয়ার পর তার ছেলে জাহিদ হাসান সোনারগাঁ পৌরসভার ছাত্রলীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত নেতা শাহরিয়ার খাঁন সাজুর কাছে তা বায়নায় বিক্রি করে দেন। সাজু বায়না করে ওই জমিতে সাইনবোর্ড সাটিয়ে দখলের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে এক সপ্তাহ আগে মায়া রানী বিশ্বাসের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর করে। ফলে পুনরায় কয়েক দফায় বিচার সালিশ হয়। সেই বিচার সালিশের রায়ও মায়া রানী বিশ্বাসের পক্ষে যায়। সেই রায় উপেক্ষা করে জোরপূর্বক সাজু ১০-১৫ জনের দল বল নিয়ে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে নিজেরাই মাপঝোপ করে সীমানা খুটি দেয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশর লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের গিয়ে মায়া রানী বিশ্বাস নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের কাছে গিয়ে বিচার দাবি করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাৎক্ষণিক সাংসদ ঐ নারীকে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে দখলের প্রমাণ পান। এক পর্যায়ে দখলদারদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারী দিলে রাতের আধারে সাজু ও তার লোকজন সাটানো সাইনবোর্ড সরিয়ে নেয়। মায়া রানীর প্রতিবেশী গুরু চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সাজু ও জাহিদ বাহিনী নিয়ে মায়া রানী বিশ্বাসের বাড়িঘর ভাংচুর করে জমি দখল নিয়েছে। বিচার সালিশে মায়া রানীর পক্ষে রায় আসলেও জোরপূর্বক এ জমি দখল করেছে। সাজু বাহিনী ভয়ংকর প্রকৃতির। তারা পাশে থাকা আমার জমিতেও সাইনবোর্ড দিয়েছিল। পরে তাদের চাপ দিলে সাইনবোর্ড আমার জায়গা থেকে সরিয়ে নেয়।মায়া রানীর আরেক প্রতিবেশী মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, জহিরউদ্দিন একজন ভূমিদস্যু ছিল। সে জাল দলিলের মাধ্যমে আমার ৩১ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা করে। ওই জমি নিয়ে এখনো কোর্টে মামলা চলছে। মায়া রানী বিশ্বাসের জমিও সে জাল দলিল তৈরি করে দখলের চেষ্টা করে। এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপে আর পারেনি।সোনারগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জসিমউদ্দিন মিয়া বলেন, এ জমির উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জমি রায় মায়া রানীর কাগজপত্র সঠিক পাওয়া যায়। পরে সালিশী রায় তার পক্ষে দেওয়া হয়। প্রভাব খাটিয়ে কেউ দখল করলে তার সঙ্গে আমরা মারামারিতে লিপ্ত হতে পারি না। প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সাগর বলেন, সাজু বর্তমানে ছাত্রলীগের কেউ না। ২০২১ সালের ১৩ জুলাই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাইল সংগঠনের প্যাডে স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সাধারণ সম্পাদক সাজুকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। অব্যাহতি দেওয়ার পরও সে ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে আসছিল। পরে ২০২৩ সালে র্যাব পরিচয়ে ২৮৩টি মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগে সভাপতি রবিনসহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। বর্তমানে পৌরসভায় ছাত্রলীগের কমিটি নেই।
অভিযুক্ত শাহরিয়ার খাঁন সাজু বলেন, আমরা একজন ওয়ারিশের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে দখলে গিয়েছি। আমাদের কাগজ সঠিক রয়েছে। তবে সালিশের রায় আমাদের পক্ষে ছিল। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভূক্তভোগী হিন্দু নারীর জমি জাল দলিলের মাধ্যমে দখলের চেষ্টা করে। তাৎক্ষনিক জানতে পেরে সেখানে গিয়ে সাইনবোর্ড দেখি। কাগজপত্র নারীর পক্ষে থাকায় তাদের বিরুদ্
Leave a Reply