রাকিবুল হাসান,শ্যামনগর প্রতিনিধিঃ
আসাদুজ্জামান ৩৭ তম বিসিএস এর প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর বিগত ৩১ আগস্ট ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। শ্যামনগরে যোগদানের পর থেকে তিনি সততা, নিজ কর্মদক্ষতা, বিনয় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের কারণে সহকর্মী ও সেবা প্রার্থীসহ শ্যামনগরের আপামর জনসাধারণের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি ৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে এ কর্মকর্তার নিয়মিত বদলির আদেশ হওয়ায় শ্যামনগরের সাধারণ মানুষ ব্যথিত হয়েছেন।একজন নিযুক্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দ্বারা মাদকদ্রব্য বিক্রেতা ও সেবনকারীসহ জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে আপোষহীন ভাবে তাদেরকে জেল জরিমানার আওতায় এনেছেন, উপজেলার ধ্বমনি হিসেবে পরিচিত অনেক খাল থেকে অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করে সেগুলিকে উন্মুক্ত করেছেন, নদী ও খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছেন, অসাধু ব্যবসায়ী ও মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং নানামুখী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সাহসিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।এর পাশাপাশি একজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সর্বোচ্চ দ্রুততায় তিনি সততা ও দক্ষতার সাথে রেকর্ড পরিমাণ জমির মিউটেশন কার্য সম্পাদন করেন, সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত দানের ক্ষেত্রে সঠিক উপকারভোগীদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা ও স্বচ্ছতার পরিচয় প্রদানসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক পদক্ষেপ ভূমিহীনদের আশ্রয়ন প্রকল্পের সুষ্ঠু তদারকি করেছেন, ভূমি সংক্রান্ত ১৪৫ ধারার বারিত আদেশের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সহ ১৫০ ধারাও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করেছেন।সহকারি কমিশনার ভূমি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তার সব থেকে বড় সফলতা হচ্ছে জমির মিউটেশন কার্য সম্পাদন সহ জমিজমা সংক্রান্ত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে তার আদেশের বিপরীতে আনীত আপিলের সবকটিতেই তিনি জয়ী হয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাইরেও নিজ সহকর্মীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও যেকোনো ধরনের সাহায্য প্রার্থীদেরকে ব্যক্তিগতভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য তার রয়েছে আলাদা সুনাম।তাইতো এ মানবিক কর্মকর্তার নিয়মিত বদলির আদেশও স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছেন না সহকর্মীসহ শ্যামনগরের জনসাধারণ।তাঁর বদলির আদেশের বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব নাজিবুল আলম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ সরকারি চাকুরি বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারে চাকুরির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট স্টেশনে নির্দিষ্ট সময় দায়িত্ব পালনের পর বিভাগীয় সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত বদলির আদেশ হয়,সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান এর ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়মে নিয়মিত বদলির আদেশ হয়েছে এবং তিনি কাজ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আরও কিছুদিন অফিস করবেন।নিজের বদলির বিষয়ে আসাদুজ্জামান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আমি সততা,নিষ্ঠা ও সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করেছি শ্যামনগরের মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য এবং এখানকার মানুষের নিকট থেকে অতুলনীয় সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি যা আমি সারা জীবন মনে রাখব। এখন সরকারি চাকুরির বিধি মোতাবেক নিয়মিত বদলির আদেশে আমাকে অন্য স্টেশনে যেতে হলেও শ্যামনগরবাসীর প্রতি আমার আন্তরিকতা ও ভালোবাসা চলমান থাকবে।
তার বদলির খবর শুনে সহকর্মী হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, ‘স্যার আমাদের সাথে সবসময় হাসিমুখে কথা বলে আমাদের সার্বিক খোঁজখবর রাখতেন এবং আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেন।স্যারের কথা আমরা আজীবন মনে রাখব।আরেক সহকর্মী ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় থাকা আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্যারের মত মানবিক কর্মকর্তা খুব কম পেয়েছি, তিনি বদলি হয়ে শ্যামনগর ছেড়ে যাচ্ছেন শুনে খুব খারাপ লাগছে। স্যারের জন্য সবসময় শুভকামনা থাকবে।’ ভালো থাকুক শ্যামনগরবাসী, ভালো থাকুন মানবিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।
Leave a Reply