বিশেষ প্রতিবেদনঃ
যমুনা নদী অববাহিকার কাজিপুর উপজেলার পলি সমৃদ্ধ ভূমিতে প্রচলিত ও আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে বিভিন্ন কৃষি ফসল উদ্বৃত্ত পরিমাণে উৎপাদন করে থাকে স্থানীয় কৃষকেরা। নতুনত্বের আকাংখা থেকে এ ধারায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে আধুনিক চাষ পদ্ধতি, যন্ত্র, নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত সমাজ ও নতুন ফসল। এ ধারাবাহিকতায় এবার যুক্ত হলো শীত প্রধান আবহাওয়ার বিদেশি ফসল স্ট্রবেরী। উচ্চ মূল্যের ফসল স্ট্রবেরি বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদে সফল হলেও শষ্য ভান্ডার খ্যাত কাজিপুরে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন উপজেলার গান্ধাইল গ্ৰামের তরুন ও শিক্ষিত যুবক রোকনুজ্জামান রাসেল।নিজ উদ্যোগে ২ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা স্ট্রবেরি পূর্ণমাত্রায় ফলন শুরু না হলেও গাছের ফুল এবং ফল আশা জাগানিয়া, ফলের মানও ভালো, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাণিজ্যিকভাবে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন তিনি। সরকারি সহযোগিতায় কাজিপুরে অধিক লাভজনক কৃষি পণ্য হিসেবে সম্প্রসারণ ঘটতে পারে মনে করছেন সচেতন মহল।স্ট্রবেরি ফ্র্যাগারিয়া (Fragaria) জাতীয় উদ্ভিদ এবং সারা বিশ্বে এটি ফল হিসেবে চাষ করা হয়। গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় এই ফল, ফলের রস, জ্যাম, আইস ক্রীম, মিল্ক শেক এবং আরও অনেক খাদ্য তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শিল্পায়িত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যবহৃত হয়। আঠারো শতকের শেষের দিকে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্ট্রবেরির চাষ করা হয়। এটি পরবর্তীতে চিলি, আর্জেন্টিনা এবং অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে ও বেশি দিন থাকে সেসব এলাকায় বারি স্ট্রবেরি-১ নামে একটি উচ্চফলনশীল জাতের স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে। স্ট্রবেরির পাকা ফল টকটকে লাল রঙের হয়। এ ফলটি সুগন্ধীযুক্ত, টক মিষ্টি স্বাদের। জমির পাশাপাশি টব, বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় এ ফল চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, যশোর, শ্রীমঙ্গল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি জায়গায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
যমুনা নদী দ্বারা বিভক্ত কাজিপুর উপজেলার কৃষি জমি পলি মাটি সমৃদ্ধ, কম খরচ ও পরিচর্যায় এখানে অধীক ফসল ফলায় কৃষক। প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত হয় ধান এবং ভুট্টা। স্ট্রবেরি চাষে যে পরিমান খরচ ও পরিচর্যা প্রয়োজন হয়, সে তুলনায় অধিক লাভজনক এবং এলাকায় নতুন ফসল। এ বিবেচনা থেকে উপজেলার গান্ধাইল গ্ৰামের শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা রোকনুজ্জামান রাসেল তার পারিবারিক ২ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষের উদ্যোগ নেন। মৌসুমের শুরুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে স্ট্রবেরির চারা সংগ্রহ করে রোপন করেন এবং ইন্টারনেট ও সিরাজগঞ্জের সফল একজন স্ট্রবেরি চাষির পরামর্শ অনুযায়ী সার, পানি ও পরিচর্যা করতে থাকেন। ২ মাস পর থেকে ফল আসতে শুরু করেছে, আগামী একমাস ফল সংগ্রহ করা যাবে, তবে গরমের প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে ফলের সাইজ ছোট হতে থাকবে বা উৎপাদন কমতে থাকবে জানিয়ে রাসেল বলেন, ২ বিঘা জমিতে ১০ হাজার চারা রোপণ করি, চারার মূল্য, সার, পানি, পরিচর্যা ও অন্যান্য বাবদ ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, এরমধ্যে অনেক সামগ্রী রয়েছে যা আগামীতে আবার ব্যবহার করা যাবে, সর্বোচ্চ ১২ শত টাকা থেকে ৩ শত টাকা দর উঠানামা করে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ বিঘা জমিতে ২ হাজার কেজি স্ট্রবেরি উৎপাদন হবে আশাকরি, গড় মূল্যের নিচে প্রতি কেজি ৫ শত টাকা দরে বিক্রিও যদি হয়, তাতেও ১০ লক্ষ টাকা আয় হবে, যা ধান বা ভুট্টার চাইতে অধিক লাভজনক, স্থানীয় পাইকাররা জমি থেকে স্ট্রবেরি তুলে নিয়ে যায়, ফলে বিপনন বিড়ম্বনা নেই। দু একটি গাছে ফল পাকা শুরু হয়েছে, আশপাশের স্থানীয় বিভিন্ন বয়সীরা স্ট্রবেরি দেখতে প্রতিদিন ভির জমায়, স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ ও ব্যায় কম কাজিপুরে সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, তরুণ উদ্যোক্তা রাসেলের সাফল্য আশা জাগানিয়া, পরবর্তীতে তাকে উচ্চ মূল্যের ফসলের প্রদর্শনীর জন্য বিবেচনা করা হবে, এছাড়াও পলি নেট হাউজ প্রকল্পের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দেয়া আছে, যা আগাম স্ট্রবেরি চাষে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে, কাজিপুরের মাটিতে স্ট্রবেরি চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply