এম,এ রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
বগুড়ার ধুনটে নবজাতক শিশুকে ১ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বেলকুচি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।জানা যায়,উপজেলার ধুনট সদর ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রামের মৃত আশাদুল ইসলামের মেয়ে আয়শা খাতুন (১৭) বেলকুচি গ্রামে তার নানা মৃত কপিল উদ্দিনের বাড়িতে নানী আছিয়া বেগমের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। গত এক বছর আগে ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকুরিরত অবস্থায় নওগাঁ জেলার নজিপুর এলাকার সোহেল নামে এক যুবকের সঙ্গে আয়শার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আয়শা ও সোহেল ধুনটের বেলকুচি গ্রামেই বসবাস করে। বিয়ের কিছুদিন পর আয়শাকে বাড়িতে রেখে সোহেল জীবিকার তাগিদে ঢাকায় যায়। গত ২৮ নভেম্বর শেরপুর উপজেলার মাহবুব ক্লিনিকে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন আয়শা খাতুন। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখার আগেই ১ লাখ টাকায় শিশুটিকে ওই ক্লিনিক থেকেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাত্র ৩০ হাজার টাকা মা আয়শার হাতে দেওয়া হয় জানা যায়।এ বিষয়ে আয়শার প্রতিবেশি মামী তারাভানু বলেন, আয়শা খাতুনের পরিবারে তেমন কেউ নেই। সে এবং তার বৃদ্ধ নানী অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। গত ২৮ নভেম্বর তাকে ধুনটের বাড়ি থেকে শেরপুরের মাহবুব ক্লিনিকে নিয়ে যায় এবং সিজারের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু পরে আয়শা খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসলে তার সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে শুনতে পাই। সে সন্তানের জন্য এখনও কাঁদে। কিন্তু দরিদ্র পরিবার হওয়ায় তার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই।নবজাতক সন্তানের মা আয়শা খাতুন বলেন, প্রতিবেশি নানা শাহীন আমাকে বাড়ি থেকে শেরপুরের মাহবুব ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এবং সেখানে সিজার করায়। শুনেছিলাম আমার ছেলে সন্তান হয়েছে। কিন্তু দেখতে পারিনি। জ্ঞান ফেরার আগেই শাহীন নানা আমার সন্তানকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যায়। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়। আমি টাকা নিতে রাজি হইনি। আমাকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার পর রাজি হয়েছি। আমার সন্তান কথায় আছে জানিনা। আমার সন্তানের ঠিকানা শুধু শাহীন নানাই জানে। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে সবার সহযোগিতা চাই।আয়শার প্রতিবেশি নানা রফিকুল ইসলাম শাহীন ধুনট সদর ইউনিয়নের বেলকুচি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে। রফিকুল ইসলাম শাহীন বর্তমানে শেরপুর উপজেলায় বসবাস করেন।সন্তান বিক্রির ঘটনার বিবরন সম্বলিত আয়শার একটি ভিডিও বক্তব্য ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন বেলকুচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সমাজকর্মী ফৌজিয়া হক বিথি। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ভিডিও ধারন করায় শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথিকে হুমকি দেয়া হয় বলে জানা যায়। এঘটনায় শনিবার রাতে ফৌজিয়া হক বিথি বাদী হয়ে রফিকুল ইসলাম শাহীনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় একটি জিডি দায়ের করে।শিক্ষিকা ফৌজিয়া হক বিথি বলেন, দরিদ্র পরিবারের মেয়ে আয়শা খাতুন কে অর্থের লোভ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সন্তানকে বিক্রি করে দেয় রফিকুল ইসলাম শাহীন। আয়শা তার সন্তানকে ফিরে পেতে চায়। তাই তাকে আইনী সহায়তার পরামর্শ দেওয়ায় রফিকুল ইসলাম শাহীন উল্টো আমাকে হুমকিসহ আমার বিরুদ্ধেই থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। সন্তান বিক্রির ঘটনা উল্লেখ করে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হলে, পরে তা সাংশোধন করে আয়শার ঘটনা বাদ দিয়েই সাধারণভাবে জিডি নিয়েছে পুলিশ। ওই সন্তানকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে এবং আইনী সহায়তা প্রদান করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন ওই শিক্ষিকা। তিনি আরো বলেন রফিকুল ইসলাম শাহীনের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় নানা ভাবে আমাকে কোন ঠাসা করার চেষ্টা করছে। ওই ঘটনার পর থেকে শাহীন তার লোকজন দিয়ে জমি দখলেরও চেষ্টা চালাচ্ছে। গ্রামের সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে এটা আমাদের পারিবারিক সমস্যা।
তবে এবিষয়ে রফিকুল ইসলাম শাহীনের বক্তব্য নিতে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ব্যার্থ কলের কারনে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।এ বিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সৈকত হাসান বলেন, সন্তান বিক্রির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এবিষয়ে অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply